Wednesday, September 18, 2013

জি.এম. ফুডের হ্যাঁ-না

উন্নত বিশ্বে জি.এম. ফুড অনেক আগে থেকে ব্যবহার হয়ে আসলেও আমরা এর সাথে খুব একটা পরিচিত নই। 

বিশ্বে কোন কিছুই এখন আর সীমারেখার মধ্যে আবদ্য থাকছে না, তাই  বলা যায় জি.এম. ফুড সম্পর্কে আমরা কিছু জানি বা নাজানি বিভিন্ন ভাবে আমরা তা গ্রহন করে যাচ্ছি। ইউরোপ-আমেরিকায় যেখানে বিভিন্ন গ্রুপ বা প্রতিষ্ঠান জি.এম. ফুডের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আন্দোলন করছে, আফ্রিকায় অনেক দেশের কৃষক সহজেই অধিক ফসল উত্পাদন করে আনন্দের হাসি হাসছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জি.এম. ফুডের সংগা দিতে গিয়ে বলেছেন- যেখানে পদার্থের জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল DNA কে কৃত্তিম ভাবে এমন   পরিবর্তন করা হয় যা প্রাকৃতিক ভাবে হয় না। এটাকে মডার্ন বায়োটেকনোলজি বা জিন টেকনোলজি কখনও রিকম্বিনেন্ট DNA টেকনোলজি বা জিনেটিক ইন্জিনিয়ারিং বলা হয়।

আপাত দৃষ্টিতে জি.এম. ফুড উত্পাদনকারী ও ব্যবহারকারী উভয়ের জন্যই লাভজনক-কারণ উত্পাদন খরচ কম, দীর্ঘদিন সংরক্ষন করা যায়, পুষ্টিগুনও বেশি।  জি.এম. ফুডের প্রাথমিক উদ্যেশ্য ছিল শস্যের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা। অর্থা পোকা-মাকড়, ভাইরাস ও আগাছার হাত থেকে শস্যকে রক্ষা করা। এ পদ্ধতির ফলে নির্দিষ্ট ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়া থেকে জিন সংগ্রহ করে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে উদ্ভিদকে পোকা-মাকড়ের আক্রমন, রোগবালাই ও আগাছার ক্ষতি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে।

 নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যের কথা চিন্তা করলে সাধারনত প্রকৃতগত ভাবে প্রাপ্ত খাদ্যের প্রতি কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই আমাদের আত্ববিশ্বাস যে হাজার বছর ধরে আমরা বংশানুক্রমে যা খেয়ে আসছি তা আমাদের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর। তাই তো জি.এম. ফুড বা অন্য যে কোন নতুন খাদ্য আমাদের কাছে আসলেই প্রশ্ন উঠে স্বাস্থ্য ও নিরাপদের বিষয়টি। আর এ বিষয়টি যথা সময়ে নিশ্চিত করার দ্বায়িত্ব রাষ্ট্রের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর খাদ্য নিরাপত্তা প্রোগ্রামের একটি উদ্দেশ্য হলো- যে কোন নতুন খাদ্য শস্য বাজারে আসার আগেই রাষ্ট্র যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জনগনকে এর নিরাপত্তা সম্পর্কে অবহিত করবে।

নিরাপত্তা বিধানের জন্য জি.এম. ফুডের প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতি হলোঃ
·        সরাসরি স্বাস্থ্যের প্রতিক্রিয়া (বিষক্রিয়া) লক্ষ্য করা;
·        এলার্জির প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা;
·        নির্দিষ্ট উপাদানের পুষ্টিগুন বা বিষক্রিয়ার বৈশিষ্ট লক্ষ্য করা;
·        প্রয়োগকৃত জিনের স্থায়িত্ব কাল লক্ষ্য করা;
·        জেনেটিক মডিফিকেশনের ফলে সার্বিক পুষ্টিগুনের প্রভাব লক্ষ্য করা;
·        জিন প্রতিস্থাপনের ফলে কোন অপ্রত্যাশিত প্রতিকৃয়ার সৃষ্টি হচ্ছে কি না তা লক্ষ্য করা।

এলার্জিসিটি, জিন ট্রাস্সফার ও আউটক্রসিং এই তিনটি বিষয় লক্ষ্য রাখা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ গুরূত্বপূর্ন। একেক ধরনের খাবার একেক জিনের জন্য এলার্জির কারন হয়ে থাকে। কিন্তু মানুষ দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে এসম্পর্কে স্বভাবত সচেতন  কোন খাবার তার জন্য এলার্জিক এবং কোনটা নয়। কিন্তু যদি কোন সতর্ক সংকেত ছাড়া এসব এলার্জিক খাবার থেকে জিন সংগ্রহ করে অন্য খাবারে প্রতিস্থাপন করা হয় তাহলে তা ভোক্তার অজানতে এলার্জিসিটির কারণ হয়ে থাকে। জি.এম. ফুড থেকে জিন মানব দেহের কোষে প্রতিস্থাপিত হয়ে থাকে, জি.এম. ফুড প্রক্রিয়ার সময় প্রতিস্থাপিত জিন এর এন্টিবায়োটিক বৈশিষ্ট যথাযথ ভাবে নিয়ন্ত্রন করা না হলেও মানব দেহের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। আউটক্রসিং বা জি.এম. ফুড ও সাধারন খাদ্য শস্য যখন পাশা পাশি চাষ করা হয় তখন উভয়ের সংমিশ্চ্রণে অনিয়ন্ত্রিত নতুন বৈশিষ্ট সম্পন্ন শস্য উত্পাদিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। সুতরাং নতুন জিন প্রতিস্থাপনের উত্স ও প্রক্রিয়া নির্বাচনের পূর্বে পরিবেশের উপর এর প্রতিক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ার স্থায়িত্বকাল বিবেচনা করা জরুরী।

ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠির খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে পরিবেশের উপর জি.এম. পদ্ধতির দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব বিবেচনবয় আনা না হলে শস্যের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন পোকা-মাকড়, আগাছা ইত্যাদির জন্ম চক্র ভেঙ্গে যাবে যা ভবিশ্যতে পরিবেশের জন্য মারাত্বক ক্ষতির কারণ হবে। সুতরাং খাদ্য নিরাপত্তার সাথে সাথে পরিবেশের নিরাপত্তার বিষয়টি সমান গুরুত্ত দেওয়া প্রয়োজন।

বাজারে যেসব নিরাপদ জি.এম. ফুড পাওয়া যাচ্ছে এগুলোকে নিরাপদ বলার ভিত্তির দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়-নির্দিষ্ট খাবারটি নিরাপদ কারণ খাবরটি যে দেশের যে এলাকায় ব্যবহার হচ্ছে সে এলাকার লোকজনের মধ্যে এ খাবার গ্রহনের পর থেকে ব্যাপক কোন বিশেষ প্রতিক্রিয়া/ রোগব্যধি পরিলক্ষিত হয়নি। আর্থাত্ ব্যবহারের পূর্বে নিশ্চিত ভাবে কোন মন্তব্য করা সম্ভব না। তা ছাড়া সকল জি.এম. ফুডকে মোটের উপর নিরাপদ বা অনিরাপদ বলা সম্ভব নয়। কারন একেক ফুডের জিন সংগ্রহের উত্স ও প্রতিস্থাপনের পদ্ধতি একেক ধরনের। সুতরাং প্রত্যেকটার জন্য আলাদ আলাদা পরীক্ষা ও মন্তব্য প্রয়োজন।

সরকারী ভাবে জি.এম. ফুডের মান নিয়ন্ত্রনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে অনেক দেশ এর উপর এখন পর্যন্ত তেমন কোন নিয়ন্ত্রন করছে না। আবার জি.এম. ফুড রপ্তানী ও আমদানিকারী দেশসমূহ যারা নিরাপত্তার বিষয় গুরুত্ব দিচ্ছে তারাও স্বাস্থ্য ও পরিবেশের প্রাথমিক ক্ষতি সংক্রান্ত ও বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট বিষয় যেমন-টেষ্টিং ও লেভেলিং পরীক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে বলে সংশ্লিষ্টমহল মনে করছেন
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাপ্ত জি.এম. পদ্ধতির সকল খাদ্য শস্যকে তিনটি প্রধান বৈশিষ্টে ভাগ করা যায়ঃ
-পোকা-মাকড় প্রতিরোধক;
-ভাইরাস প্রতিরোধক;
-আগাছা প্রতিরোধক

জি.এম. ফুডের উপকারিতা-অপকারিতা বিভিন্ন মত থাকলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রাথমিক ভাবে দু’টি বিষয়ের উপর বিবেচনা করে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে- জি.এম. পদ্ধতির মাধ্যমে খাদ্যের পুষ্টিমান বৃদ্ধি, এলার্জিসিটি হ্রাস ও পর্যাপ্ত খাদ্য উত্পাদন করে জন স্বাস্থ্যের ব্যপক উন্নতি সাধন সম্ভব এবং একক ভাবে মানব স্থাস্থ্য ও পরিবেশের উপর প্রতিক্রিয়া  মূল্যায়ন না করে বিশ্বব্যাপী জি.এম. ফুড গ্রহণে মানব স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পরীক্ষার জন্য আধুনিক প্রযুক্তিকে  সাংগঠনিক ভাবে খাদ্য তৈরীর সঠিক ও উন্নত পদ্ধতিতে অগ্রসর হতে হবে।

আর এতে জি.এম. পন্য শুধু নিরাপদ কিনা সে বিষয় চিন্তা করলেই চলবে না, অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক ও নৈতিক দিক।

No comments:

Post a Comment

WAZIPOINT:
Thank you very much to visit and valuable comments on this blog post. Keep in touch for next and new article. Share your friends and well-wisher, share your idea to worldwide.