উচ্চ ফলনশীল ফসল প্রয়োজন যা লবণাক্ত জমি ও পানিতে চাষ সম্ভব। এ ক্ষেত্রে জি. এম. ফুডই আশার আলো দেখাতে পারে।
বিশ্বের জনসংখ্যা প্রায় ৬শ কোটি এবং ধারনা করা হচ্ছে আগামী ৫০ বছরে ইহা দ্বিগুণ হবে। এই বিস্ফোরিত জনসংখ্যার জন্য খাদ্য জোগাড় করা আগামী বিশ্বের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। বুদ্ধাদের ধারনা জি.এম. ফুডই কেবলমাত্র ভবিষ্যতের খাদ্য সমস্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে।
সাম্প্রতকি বছরগুলোতে জি.এম. ফুড নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকার সংবাদপত্র গুলো বেশ চমকপ্রদ সংবাদ পরিবশেন করছে যার প্রভাব সারা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে পরছে। উন্নত দেশগুলোর বিশেষ করে ইউরোপ-আমরেকিার বিভিন্ন পরিবশেবাদি ও জনস্বার্থ সংরক্ষনবাদি গ্রুপ সক্রিয়ভাবে এর বিরোধিতা করে আসছে। জি.এম. ফুড নিয়ে অনেক গবেষণা চলছে। এই ফুড গ্রহণের উপকারিতা ও অপকারিতার পক্ষে-বিপক্ষে অনেক তর্ক-বিতর্ক চলছে। নব্বই এর দশকের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (FDA) সরকারি ভাবে জি.এম ফুড অনুমোদনের নীতিমালা তৈরির কাজ করে।
জি.এম. ফুড কি?
জি.এম. ফুড বা জি.এম.ও. (Genetically-Modified Organisms) হলো বহুল আলোচিত বিষয় যে পদ্ধতিতে প্রাণীকোষের পরিবর্তন সাধিত করে মানুষ ও পশুর জন্য খাদ্য-শস্য উৎপাদন করা হয়। উদ্ভিদের কিছু বিশেষ গুনাগুণ যেমন-পোকা-মাকড় দমনের ক্ষমতা, পুষ্টিগুণ ইত্যাদি কাঙ্খিতমানে পাওয়ার জন্য গবেষণাগারে এসব উদ্ভিদকে মৌলিক পরিবর্তন (modified) করা হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে শস্য বা উদ্ভিদের এই কাঙ্খিত গুনাগুণ পেতে হলে বিশেষ তত্বাবধানে বার বার উৎপাদনের মাধ্যমে করা সম্ভব। কিন্তু সেটা অনেক সময়সাপেক্ষ ও একেবারে সঠিক-মানের করা সম্ভব হয় না। কিন্তু জেনে-টিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে অতি অল্প সময়ে ও সঠিক-মানের গুণসম্পন্ন শস্য উৎপাদন করা সম্ভব। উদ্ভিদ কোষের একেক জিন একেক ধরনের কাজ করে থাকে। বিজ্ঞানীরা এক উদ্ভিদের জিন অন্য উদ্ভিদে স্থানান্তর করে, কখনও কখনও অউদ্ভিদজাতিয় কোষ থেকে জিন স্থানান্তর করেও নতুন জাতের উচ্চ ফলনশীল, অধিক পুষ্টি-মানসম্পন্ন বা পোকামাকড় দমনকারী উদ্ভিদ তৈরি করছেন।
জি.এম. ফুড কিভাবে অধিক ফলনশীল হয়:
পোকা-মাকড় প্রতিরোধ ক্ষমতা:
প্রতি বছর পোকা-মাকড়ের কারণে প্রচুর পরিমাণ ফসল ধ্বংস হয় এবং এই পোকা-মাকড় দমনের জন্য হাজার হাজার টন কীটনাশক ক্রয়ের পিছনে কৃষকদের প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। ভোক্তারা কীটনাশক ব্যবহৃত খাদ্য-শস্য খেতে আগ্রহী নয় অন্যদিকে কৃষিতে ব্যবহৃত অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক পানির সাথে মিশে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। সুতরাং জি.এম. ফুড উৎপাদন করে সহজেই কীটনাশক ব্যবহার পরিহার করা সম্ভব এবং এতে উৎপাদন খরচও কমে যাবে।
আগাছা দমনঃ
প্রচলিত নিড়ানি পদ্ধতিতে আগাছা দমন খরচ ও সময় স্বাপেক্ষ।কৃষকরা কখনও কখনও আগাছা দমনের কীটনাশক ব্যবহার করে থাকে যা উৎপাদন খরচ বাড়ায় ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। এক্ষেত্রে সীমিত আকারে কীটনাশক ব্যবহার করে স্বল্প খরচে জি.এম. ফুড উৎপাদন করা যেতে পারে।
ফসলের রোগ প্রতিরোধ:
অনেক ভাইরাস, ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা খাদ্য-শস্যের অনেক ক্ষতি করে থাকে।বিজ্ঞানীরা এসব রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত জি.এম. ফুড উদ্ভাবনের চেষ্টা যাচ্ছেন।
তাপ-রোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি:
অপ্রত্যাশিত ঠাণ্ডায় অনেক সময় আলু, তামাক, স্ট্রবেরী ইত্যাদি শস্যের ক্ষতি হয়ে থাকে। জেনে-টিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে ঠাণ্ডা পানির মাছের জিন এসব উৎভিদে প্রতিস্থাপন করে তাপ-সহনশীল করা সম্ভব।
লবণাক্ততা প্রতিরোধ ক্ষমতা:
পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্র উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং লবণাক্ত জমির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। তা ছাড়াও জন সংখ্যা অতিবৃদ্ধির ফলে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে এবং অনাবাদী লবণাক্ত জমি আবাদ করার প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। সুতরাং এমন উচ্চ ফলনশীল ফসল প্রয়োজন যা লবণাক্ত জমি ও পানিতে চাষ সম্ভব। এ ক্ষেত্রে জি. এম. ফুডই আশার আলো দেখাতে পারে।
জি এম ফুড শরীরের জন্য ক্ষতিকর
ReplyDelete